Saturday, March 17, 2012

কসমস পাঠ: নিউটন পর্ব

১৬৯৬ সাল। সুইস গণিতবিদ জোহান বার্নুলি সমকালীন গণিতবিদদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তখনো পর্যন্ত অনিস্পন্ন একটা সমস্যার ব্যাপারে। নাম barichistochrone problem. শুরুতে বার্নুলি সমাধানের জন্য ছয়মাসের সময় সীমা বেধে দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে গণিতিবিদ লিবনিৎজ এর অনুরোধে সেই সময় বাড়িয়ে দেড় বছর করেন। বোঝাই যাচ্ছে, এটা কোনো যেনতেন সমস্যা নয়!
১৬৯৭ সালের জানুয়ারী মাসের ২৯ তারিখ, ঘড়িতে বিকাল চারটা। এমন সময় নিউটন চ্যালেঞ্জটার কথা জানতে পারেন। এবং পরদিন সকালে অফিসে আসার আগেই, তিনি গণিতের নতুন একটা শাখাই আবিষ্কার করে ফেলেন, নাম ক্যালকুলাস অফ ভ্যারিয়েশন্স। এবং সেটা ব্যবহার করে barichistochrone সমস্যাটা সমাধান করে সেই সমাধান আবার ডাকে পাঠিয়েও দেন প্রকাশনার জন্য। নিউটনের অনুরোধে সমাধাণটি বেনামীতে প্রকাশিত হয়। কিন্তু সমাধানটির স্বকীয়তা, আর চমৎকারিত্বই নিউটনের পরিচয় ফাস করে দেয় শেষে! বার্নুলী সেই বেনামী সমাধানটা হাতে পেয়ে বললেন, “we recognize the lion by his claw.” নিউটনের বয়স তখন ৫৫ বছর।
এই চির অকৃতদার মানুষটি তারা পুরো জীবনই গাণিতিক ব্যাপারে ক্ষুরধার ছিলেন। অবশ্য বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বেশ খিটমিটে, আর মুডি হয়ে পড়েন। এসব দেখে সমকালিন অনেকেই বলত নিউটনের হয়তো নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছে। তবে এসবের কারণ অন্য কিছুও হতে পারে। নিউটন সারা জীবনই রসায়ন, (তৎকালিন আলকেমি) চর্চা করে গেছেন। এবং সে সময়, বিভিন্ন যৌগ/মৌল সনাক্ত করনের একটা প্রচলিত ধাপ ছিলো, জিভে নিয়ে স্বাদ গ্রহন করে দেখা! ক্রমাগত এসব করতে গিয়েই তিনি আর্সেনিক এবং মার্কারি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন বলে ধারনা করা হয়।
গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি তার আগ্রহী হয়ে ওঠার গল্পটাও চমকপ্রদ। ১৬৬৩ সালে এক মেলা থেকে নিউটন জ্যোতিস শাস্তের (মানে ভাগ্যগণনা আরকি) উপর একটা বই কেনেন। বয়স তখন তার ২০ বছর। এই বইতে তিনি একটি বৈজ্ঞানিক চিত্র পান যেটা কোনোভাবেই বুঝতে পারছিলেন না। কারণ তখনও তিনি ত্রিকোনোমিতি জানতেন না। তাই সেটা বোঝার জন্য তিনি কিনলেন এক ত্রিকোনোমিতির বই। কিন্তু ত্রিকোনোমিতি পড়তে গিয়ে নানান রকম জ্যামিতিক যুক্তি এসে হাজির হলো সামনে। অগত্যা, জ্যামিতির মাস্টারপিস ইউক্লিডের ইলিমেন্টস বইটাই কিনে পড়তে লাগলেন। এর দু বছর পরে তিনি ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন। তার বয়স তখন কেবল ২২ পেরিয়েছে!
ছাত্রাবস্থায় নিউটনকে সবচেয়ে কৌতূহলি করে তুলেছিলো আলো এবং সূর্য। তিনি প্রায়ই সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতেন! একবার এক আতশ কাঁচ দিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে তার চোখ ঝলসে গেল! সে সময়ের যন্ত্রণা নিয়ে তাকে লিখতে দেখি,
“In a few hours I had brought my eyes to such a pass that I could look upon no bright object with neither eye but I saw the Sun before me, so that I durst neither write nor read but to recover the use of my eyes shut myself up in my chamber made dark three days together & used all my means to divert my imagination from the Sun. For if I thought upon him I presently saw his picture though I was in the dark.” (COSMOS pg, 87)
১৬৬৬ সালে প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে, নিউটন নিজের গ্রামের বাড়ি ফিরে যান। বাধ্য হয়েই এই এক বছর অলস সময় কাটাতে হয় তাকে। এবং অলস সময় কাটানোর সবচেয়ে মজাদার উপায় আর কী হতে পারে, বিজ্ঞান আর গণিতের যুগান্তকারী সব আবিষ্কার করা ছাড়া? এবছর তিনি, মেতে থাকেন ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস নিয়ে, আবিষ্কার করেন ইন্ট্রিগাল ক্যালকুলাস, আলোর ব্যাপারে মৌলিক অনেক আবিষ্কার করতে সক্ষম হন এবং তার মহাকর্ষ সূত্রের মূল ধারণাগুলোও দাড়া করান এ সময়েই। এর সঙ্গে তুলোনীয় আর একটা বছরই আছে পৃথিবীর ইতিহাসে, ১৯০৫ সাল। যখন আইনস্টাইন তার আবিষ্কারগুলো করেন। ভবিষ্যতেও এমন কিছু হবে নিশ্চয়ই, অন্য কারো হাতে!
এই যুগান্তকারী আবিষ্কারগুলো তিনি কীভাবে করলেন? এই প্রশ্ন করা হলে নিউটনকে উত্তর দিতে দেখা যায়, ‘By thinking upon them’. তার এসময়ের কাজগুলো এতই গুরূতপূর্ণ ছিলো যে কেমব্রিজে তার শিক্ষক আইসাক বারোও নিজের পদ ছেড়ে দেন নিউটনের জন্য যায়গা করে দিতে! (আমাদের দেশে কোনো নিউটন জন্মালে তার জন্য কোনো শিক্ষক এমন করবে কি না সেটা ভাবার বিষয়)
মধ্যচল্লিশে নিউটন কেমন ছিলেন সেটা জানা যায় তার এক ভৃত্যের বর্ণনায়, “I never knew him to take any recreation or pastime either in riding out to take the air, walking, bowling, or any other exercise whatever, thinking all ours lost that were not spent in his studies, to which he kept so close that he seldom left his chamber unless [to lecture] at term time… where so few went to hear him and for want of hearers, read to the walls.” (COSMOS, pg 87)
কেপলারের মত নিউটনের ছাত্ররাও জানলো না তারা কী হারালো!
নিউটন কেপলারের তিনটা সূত্র থেকে এদের মূল কারণ, মধ্যাকর্ষণের বিপরীতবর্গীয় সূত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। এ নিয়ে গর্বকরে নিউটন তার Principia তে লেখেন, “I now demonstrate the frame of the System of the World”. তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, তিনি যে কেপলারের সূত্রগুলো থেকেই তার মধাকর্ষণ সূত্রের ক্লু পেয়েছিলেন সেটা আর এই বইতে উল্লেখ করেননি। তবে ১৬৮৬ সালে অ্যাদমন্ড হ্যালির (হ্যালির ধুমকেত যার নামে) সাথে এক পত্রালাপে তিনি উল্লেখ করেন, “I can affirm that I gathered if from Kepler’s theorem about twenty years ago.” (COSMOS pg. 88)
কেপলার এবং নিউটন মানব ইতিহাসের এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। তারাই প্রমাণ করেন যে প্রকৃতি কিছু সরল গাণিতিক নিয়ম মেনে চলে, যেটা এই পৃথিবীতে যেমন সত্য, দূর নক্ষত্রবীথিতেও একই রকম সত্য, এবং আমাদের চিন্তা সেই সূত্রকে আবিষ্কার করতে সক্ষম। সভ্যতা সম্পর্কে আমাদের আধুনিক ধারণা, এবং মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের যাবতীয় অনুসন্ধানই এই দুজনের অন্তর্জ্ঞানের প্রতি গভীরভাবে দায়বদ্ধ।
নিউটন যদিও নিজের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর সম্পর্কে বেশ রক্ষনশীল ছিলেন। এবং ভিন্নমত প্রকাশকারী অন্য বিজ্ঞানীদের প্রতি তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা প্রদর্শন করতেন। কিন্তু প্রকৃতির সূচারু রহস্যময়তা সম্পর্কে ছিলেন টলেমি বা কেপলারের মতই মুগ্ধ ও বিনয়ী। মৃত্যুর কিছু আগে তাই তাকে লিখতে দেখি, “I do not know what I may appear to the world; but to myself I seem to have been only like a boy, playing on the seashores, and diverting myself, in now and then finding a smoother pebble or a prettier shell than ordinary, while the great ocean of truth lay all undiscovered before me.” (COSMOS pg 90)

1 comment:

  1. This is my Good luck that I found your post which is according to my search and topic, I think you are a great blogger, thanks for helping me out from my problem..
    1990 Jeep Grand Wagoneer AC Compressor

    ReplyDelete