Monday, August 27, 2012

বিচ্ছিন্ন গণিত - ২

একটা সময় পর্যন্ত আমি খুব আগ্রহ করে পাবলিক ব্লগে লিখেছি। এখনো ইচ্ছাটা আছে, কিন্তু নানা কারনে আগ্রহটা কমে গেছে। যাকগে সে আলাপ পরে। আপাতত এই পোস্টটা লিখছি, ভাবনা গুছিয়ে নেওয়ার জন্য। কারণ, " লেখা হচ্ছে গুছিয়ে ভাবা"। বইয়ের অধ্যয়ায় গুলো যেভাবে সাজানো হবে সেই ক্রমেই লিখতে হবে তেমন কোনো কথা নেই। বই লেখাটা হচ্ছে সিনেমা বানানোর মত। যখন যে শট নিলে অপটিমাল হয় সেটা নিয়ে রাখতে হবে। পরে সাজিয়ে গুছিয়ে কেটে ছিড়ে মিলিয়ে একটা সুন্দর বই বানিয়ে ফেললেই হলো। ইনফ্যাক্ট সিনেমাকে অনেকে ব- ই বলে। হা হা হা!

শুরু করতে হবে সেট দিয়ে। তারপর রিলেশন, ফাংশন, ওয়েল অর্ডারিং প্রিনসিপাল, ইনডাকশন, ক্লোজার, ইকুইভ্যালেন্স ক্লাস এভাবে এগোবে।

সেট- সেটকে ফান্ডামেন্টাল ম্যাথমেটিক্যাল অবজেক্ট হিসাবে বর্ণনা করতে হবে। সেট নিয়ে মজার মজার, প্রবলেম দেওয়া যেতে পারে। টাইপ-সেট আপাতত এম এস ওয়ার্ডেই করবো। ইকুয়েশনগুলো হাতে একটা ডায়েরীতে লিখে রাখতে হবে। বইয়ের লেখায় স্রেফ কথাগুলো থাকবে। ইকুয়েশনগুলোর জন্য প্লেস হোল্ডার রেখে দেব। পরে হয়তো ল্যাটেকে টাইপসেট করবো। এই পোস্টে যে বিষয়গুলোর কথা লিখলাম সেগুলো লেখা শেষ হলে বন্ধুদেরকে কপি দেওয়া যেতে পারে। একটা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ও চালু করতে হবে। কিন্তু এখন ওসব নিয়ে ভাবতে চাচ্ছি না।

একটা সময় পর্যন্ত ভাবতাম এমন বই লিখতে হবে যেটা সবার কাজে লাগবে। কিন্তু পৃথিবীর কোনো বইই "সবার" কাজে লাগে না। এমন কি সব কম্পিউটার বিজ্ঞানী-ইঞ্জিনিয়ার-প্রোগ্রামার হতে ইচ্ছুকরাও উপকৃত হবে সেটা ভাবারো কারণ নেই। একটা পার্টিকুলার বিষয়ের জন্য প্রস্তুত মাইন্ডসেটের পার্টিকুলার শতাংশ মানুষ থাকে। আমাদের দেশে কোটি কোটি মানুষ হওয়ার সুবিধা হলো, এই পারসেণ্টেজ যতই কম হোক, মোট সংখ্যাটা কম নয়। এবং এদের অনেকেই হয়তো রিসোর্সের অভাবে এগোতে পারছে না। তাদের লক্ষ্য করেই লেখা হবে বইঅটা। সব কিছু শিখিয়ে ফেলার বদলে, একটা স্মুথ স্টার্টিং পয়েন্ট দেওয়াটাই লক্ষ্য। এগুলো ভালো লাগলে, এবন শিখতে পারলে "ধারণার" অংশটা কিছুটা পরিণত হবে। তখন তারা বড় বড় এবং আরো সুন্দর সব বই নিজে থেকেই পড়তে পারবে বলে মনে করি। শুধু এটুকু কন্ট্রিবিউট করাটাই উদ্দেশ্য। 

বিচ্ছিন্ন গণিত - ১

বিচ্ছিন্ন গণিতের (ডিস্ক্রিট ম্যাথ) একটা বই লেখা যেতে পারে। ইংরেজীতে এত এত সুন্দর বই আছে এই বিষয়ে। কিন্তু বাংলায় নেই। এই ব্যাপারটা দুর্ভাগ্য জনক। আমার যদি অনেক বড় প্রতিষ্ঠান থাকতো। তাহলে আমি কিছু মানুষকে নিয়ে রোজেনের ডিস্ক্রিট ম্যাথ বইটা অফিসিয়ালি অনুবাদ করার প্রোজেক্ট হাতে নিতাম। কিন্তু সেটা সম্ভব না। আর এসব বই অনুবাদ করার পরে প্রকাশ করা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। আমাদের দেশে প্রকাশকরা প্রফেশনাল না। স্টিফেন হকিং এর দ্য গ্রান্ড ডিজাইন অনুবাদ করার পরে প্রকাশ করতে পারিনি। কপিরাইট ব্লা ব্লা, এসবের যে আইনগত জটিলতা সেটাও যদি লেখক/অনুবাদককে সামলাতে হয় তাহলে আর প্রকাশনা সংস্থার কাজটা কি হলো? বিজ্ঞান এর বই এর জন্য ভালো এডিটর ও তারা জোগাড় করে দিতে পারে না। বাংলাদেশে বিজ্ঞান, বা টেকনিক্যাল বিষয়ের বই ছাপানো একটা নিঃসঙ্গ জার্নি। ঘরের খেয়ে বা না খেয়ে, বনের মোষ, সিংহ, হাতি, শিয়াল সব কিছু এক সঙ্গে তাড়ানোর তুল্য। যাকগে এসব কথা রাখি।

এখন এই যেহেতু অবস্থা, সেহেতু ঐসব সুন্দর বই এর অনুবাদ করা সম্ভব হবে না। নিজেকেই কিছু মিছু লিখতে হবে। ইন ফ্যাক্ট একটা ইম্প্যাক্টফুল বই লেখার জন্য রোজেনের মত এত বড় কলেবরে বই লেখার দরকারও নেই। বেসিক বিষয়গুলো কভার করলেই হবে। আমরা আজকাল ইংরেজী মুভি দেখে দেখে অনেক ইংরেজী শিখেছি। আমি জখন স্কুল কলেজে পড়তাম তখন এতটা ইংরেজী জানতাম না, আশেপাশেও অত ইংরেজী জানা ছেলেমেয়ে দেখিনি। কিন্তু ইংরেজ দেশেও লেখাপড়া না করলে ঠিকই মানুষ মূর্খ হয়। এমন কি বই এর সাথে সম্পর্ক না থাকলে ইংরেজীতে এত শত কোটি ইন্টারেস্টিং বই থাকা সত্তেও তারা পড়তে ব্যর্থ হয়। যেখানে ইংরেজী পড়তে জানা আর ইংরেজী বই পড়তে জানার মধ্যেই যোজন যোজন তফাত, সেখানে ইংরেজী মুভি দেখে শেখা ইংরেজী নিয়ে ডিস্ক্রিট ম্যাথের বই পড়া দুধের শিশুকে খাশির রেজালা খাওয়ানোর মত ব্যাপার। বদ হজম জার একমাত্র গন্তব্য। এবং তা-ই হচ্ছে।

যাকগে এসব ভাষা-রাজনৈতিক আলাপ রাখি। মূল কথা যেটা বলতে চাচ্ছিলাম, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা অনেকটা ইংরেজী শিখে ফেললেও, ইংরেজীতে ডিস্ক্রিট ম্যাথ এর মত বই পড়তে শিখেনি। এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়তে গেলে যেহেতু খুব শুরুর দিকেই তাকে এই বিষয় শিখতে হয়, সেহেতু অপরিণত মনের উপর চাপ পড়ে যায়। কারণ বিষয়টা বেশ কনসেপচুয়াল। অনেকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হিমালয় পড়া দেওয়ার মত হয়। হিমালয় যতই সুন্দর হোক, হিমালয় পাড়ি দেওয়া যতই রিওয়ার্ডিং হোক, খুড়িয়ে হিমালয় পাড়ি দেওয়া সহজ কথা নয়। অতয়েব, বাংলায় বিচ্ছিন্ন গণিতের মূল ও মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে লিখতেই হচ্ছে। দেখা যাক এর কোনো উপকারিতা আছে কি না। এই বই লেখার সিদ্ধান্ত কেন নিলাম, বা ইত্যাদি পিছনের ব্যাপার স্যাপার নিয়ে তাই আমি আর মাথা ঘামাবো না। এই ব্লগে বইটা কিভাবে তিলে তিলে গড়ে তুলছি তার একটা ক্রোনলজি সংরক্ষণ করার ইচ্ছা। যেমন নেক্স্ট পোস্টে প্রথমে কি বিষয় নিয়ে লিখতে শুরু করবো সেগুলো নিয়ে ভাববো। 

Thursday, August 23, 2012

গাৎচোরেৎশালা বা যে কারণে হচ্ছে না

কোয়ান্টাম তত্বের মূল ব্যাপারটা হলো কোয়ান্টাম লজিকএ। মানে আমাদের ক্লাসিক্যাল যে বৈজ্ঞানিক অভিক্ষা, তার পুরোটাই চলে আমাদের পরিচিত লজিক্যাল সিস্টেম এ বেইজ করে। কোয়ান্টাম লজিক একটু আলাদা। কারণ আর কিছু না, প্রকৃতি ঐ লজিক মেনে চলে। কম্পিউটার হার্ডওয়ার এর ডিজাইন নিয়ে যাদের একটু জানাশোনা আছে তারা যেমন জানেন, ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের পুরো ডিজাইনটাই হয় বুলিয়ান অ্যালজ্যাব্রা, ফার্স্ট অর্ডার সেকেন্ড অর্ডার লজিক এসব খাটিয়ে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার ডিজাইন করতে তাই এই কোয়ান্টাম লজিক দরকার। মজার ব্যাপার হলো প্রকৃতিকে বর্ণনা করতেও পুরাতন লজিক আর খাটবে না। এটা এমন এক ধরনের প্যারাডাইম শিফ্ট যে আমাদের মনে যে ভৌত বাস্তবতার চিত্র, সেটাকে কোয়ান্টাম রূপায়নে পরিবর্তন করা বেস সময়, সাধনা ইত্যাদির ব্যাপার হয়ে যায়।

যাই হোক, মনে হচ্ছে এই মূল জিনিশটা ধরতে পেরেছি। এসব ক্ষেত্রে আমার যেটা হয়, সাধারণের বোধগম্য করে কিভাবে কথাটা বলা যায়, তাই নিয়ে মাথা খাটাতে থাকি। করছিলামও তাই। একটা হাইপোথেটিক্যাল দাবার কোর্টে শুধু ঘোড়াগুলো যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর নিয়ম মেনে চলে তাহলে খেলাটা কি পরিমান এক্সাইটিং হয়ে যাবে ভাবতে ভাবতে, সাজিয়ে নিচ্ছিলাম তেমন একটা উদাহরণ। এরই ফাকে ফাকে ফাইনম্যানের বইটা থেকে পড়ছি, নতুন নতুন সমীকরণ, সমস্যা এসব নিয়েও মাথা খাটাচ্ছি। কিন্তু আজকাল যেটা হয়, যতোই এক্সাইটিং জিনিস পড়ি না কেন, ঘন্টা তিনেক পরে ঠিকই কেমন একটা ঝিমানি আসে। আজকেও এলো। আর অমনি মাথার মধ্যে বেজে উঠলো একটা শব্দ। "গাৎচোরেৎশালা!" এ কি এই বিদঘুটে শব্দ মাথায় এলো কিভাবে! এমনিতেই মেমরী কম, তার কতগুলো বাইট বেদখ্ল হয়ে গেল এই শব্দে!!

তখনই মনে পড়লো আজ সকালে পুরোনো পাপটা আবার করেছি। সেই নীল আইকনটায় টাচ করেছিলাম। ফেসবুক খুলে যাবার পরে মাত্র কয়েক পলক হয়তো ওপেনও ছিলো। কুলদা রায়ের স্টাটাস থেকে তখন এই ভয়ানক অপ্রয়োজনীয় তথ্যটি আমার মাথায় ঢুকে গেছে। তার কোনো পুরাতন শত্রু নাকি এখন পাগল হয়ে এই শব্দ বলতে বলতে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে।

ততক্ষণে ঝাকি দিয়ে সম্বিত ফিরে পেয়েছি। হাতের সমস্যাটা সমাধান করলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আবারো ঝিমানি এলো! আবারো একগাদা আজেবাজে ইউজলেস নিউরাল পাথ দিয়ে একটা ভ্রমন করে এলো আমার কনশাসনেস অথবা সেমি-কনশাসনেস। আর তখনই মনে পড়ে গেল আগে এমন হতো না।

না, মাঝে মধ্যে ঝিমানি যে আসতো না, তা না। ঝিমানি আসা ব্রেইনের কোনো জরুরি মেকানিজম মনে হয়। তবে অঙ্ক করতে কতে ঝিমানি এলে সেই ঝিমানির মধ্যেও অঙ্কের বাকিটা করে ফেলতাম বেশিরভাগ সময়। এবং স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুততর গতিতেই। আমি নিশ্চিত এই অভিজ্ঞতা সবারই হয়েছে কখনো না কখনো। ব্রেইনের ঐ স্টেটটার চেয়ে মজার কিছু হয় না। এই ব্যাপারটা সম্ভব ব্রেইন থেকে আজাইরা নিউরাল পাথ কম থাকলে। কিন্তু ইন্টারনেট এর কল্যানে অপ্রয়োজনীয় ডিট্যুরের কোনো অভাব নেই আমার মাথায়।

অতয়েব, হচ্ছে না দাদা।

ভাবছি এক ধরণের উপাত্তসংযম চালু করবো। যেখানে, নির্দিষ্ট একটা সময় জুড়ে যে কোনো মূল্যে জাঙ্ক তথ্য থেকে মাথাকে বাঁচাতে হবে।

শরীরের বেলায় অতিপ্রয়োজনীয় খাদ্যের বিপরীতে যেমন আছে মোহনীয় জাঙ্কফুড। তেমনি মনের খোরাক এর বেলায়ও জাঙ্কফুডের অভাব নেই। 

Wednesday, August 22, 2012

পদার্থবিজ্ঞান ও আমি

একভাবে দেখলে "রিলেটিভিটি" পদার্থবিজ্ঞানকে পরিণত করেছিলো জ্যামিতিতে। আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স এটাকে পরিণত করেছে "সম্ভাব্যতার তত্তে"। এ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ট্রাজেডি হচ্ছে, দীর্ঘ সময় ধরে সব রকম সুযোগ সুবিধা থাকা সত্তেও আমি এখনো এদের কোনোটারই এক্সপার্ট না।

ব্যাপার হলো এই বিষয়গুলো খুবই এক্সাইটিং। কিন্তু ঠিক সিনেমা দেখার মত না, সার্ফিং এর মত। আইনস্টাইন তার রিলেটিভিটি বইটার শুরুতে লিখেছিলেন, "I make no pretance of having witheld from the reader difficulties which are inherent to the subject". অর্থাৎ এসব বিষয়ের কিছু অন্তর্গত কাঠিন্য আছে যা স্বীকার করে নেওয়াই ভালো। কিন্তু এই কাঠিন্য অতিক্রম, উপভোগ বা আয়ত্ব করতে  এক রকম মানসিক অবস্থা দরকার। মনে হয় সেই অবস্থাটাই হারিয়ে ফেলেছি। চিন্তার ট্রেইনগুলো সোজা রাস্তায় যাবে কি, এত এত ডিস্ট্রাকশন! আপাতত এইসব ডিস্ট্রাকশন থেকে নিজেকে ডিসএনগেজ করার উপায় নিয়ে  গবেষণা শুরু করলাম।