Tuesday, July 2, 2013

কর্মকাণ্ড ১

আজ সারাদিন তেমন কোনো কাজ করিনি। আবার করেছিও। কানাডা ভিসার জন্য ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত করলাম। কত কিছু যে লাগে! যাই হোক,আশাকরি সময় মত পেয়ে যাবো। বিশেষ করে ব্যাঙ্ক ড্রাফ্ট করার ব্যাপারটা এবার কম ঝামেলায় হলো। কারণ ডিবিএস এনইউএস এর মধ্যেই একটা শাখা খুলেছে। একটা চেকলিস্ট ধরে ধরেই সব জোগাড় করেছি। এখন চেকলিস্টটা আবার প্রিন্ট করে টিক মেরেটেরে একটা ফাইনাল ভার্সন তৈরি করতে হবে। ভিসার কাগজ জমা দিতে হয় সকাল ৮ঃ৩০ থেকে ৯ঃ৩০ এর মধ্যে। শেষ কবে এত সকালে ঘুম থেকে উঠেছি মনে করতে পারছি না।

আজ সারাদিন বেশ কিছু ব্লগ পড়া হলো। মূলত সচলায়তনে। এ ছাড়া ইউটিউবে ভিডিও দেখলাম স্মার্টার এভ্রি ডে এর। বুঝতে পারলাম, আশেপাশের লোকজন এত বোরিং কেন তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ইন্টারেস্টিং কী কী করতে মন চাচ্ছে সেসব করতে থাকাটাই শ্রেয়। চাইলে শেয়ার করা যায়। ব্যাস। সঙ্গ একটা বড় ফ্যাক্টর, প্রাণশক্তিহীন লোকের সাথে বাইডিরেকশনাল যোগাযোগ রাখলে, নিজের প্রাণশক্তি নিঃশেষ হতে থাকে। তবে, ইউনিডিরেকশনাল যোগাযোগ রাখা যেতে পারে। মানে আমি কি করছি না করছি, কীভাবছি না ভাবছি, সেসব সম্পর্কে সহজেই হয়তো তেমন কেউ জানতে পারলো। এতে ক্ষতি নেই। কিন্তু অপরদিকের যোগাযোগ এড়িয়ে যেতে হবে। কোনো পাঠক এই লেখাংশ পড়ে ব্যাপারটা রূঢ় ভাবতে পারেন। কিন্তু আমি গত তিন চার বছরের এক্সপেরিমেন্টের থেকে বলছি। হ্যা অনেক মানুষের উপর এক্সপেরিমেন্ট করিনি। কিন্তু নিজের উপর করেছি, অনেক অনেক বার। দেখা গেছে, ডিপ্রেস্ট, প্রানশক্তিহীন, নেগেটিভ, এই ধরনের মানুষের সাথে মিশে বার বার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এটা সবমানুষের জন্য সার্বিক সত্য তা বলতে পারি না। কিন্তু আমার জন্য সত্য তা বলার মত, যথেষ্ট ইভিডেন্স আমি পেয়েছি এইসব নীরিক্ষা থেকে।

এছাড়া ইনফিনাইট মানকি কেইজ এর একটা পর্ব শুনলাম। এখন বাসায় ফিরতে ফিরতে রাস্তায়, হয়তো আরেকটা পর্ব শুনবো। প্রতিদিন কিছু লিখতে হবে। এখন থেকে অন্তত প্রতিদিন কী করলাম না করলাম এক ফাকে লিখে ফেলার চেষ্টা করবো।

আজ, মিশরীয় এক বালিকার সাথে পরিচয় হলো, নাম আইয়া। সে গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানে মেজর। কেবলই আন্ডারগ্রাড শেষ করেছে। এখানে এসেছে মিক্লস এর গ্রুপে ইন্টার্ণ হিসাবে। জিজ্ঞেস করলাম মিক্লস তো কম্পিউটার সাইন্সে কাজ করে, তুমি তাহলে ওর কাছে কেন? উত্তরে জানা গেল তার কম্পিউটার সাইন্সে মাইনরও আছে। আহারে যদি ওর মত কোনো ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পারতাম।

ল্যাবে আরেকটা মেয়ে এসেছে নাম ক্যাথরিন, নাকি ক্রিস্টিনা মনে করতে পারছি না এখন। সেও ম্যাথ এ মেজর। আমার সুপারভাইজরের সাথে ইন্টার্ণ করবে। ওর অরিজিন, রোমানিয়া। পড়াশুনা করছে কেমব্রিজে।

আজ গ্রুপের ওয়েবসাইটেও টুকটাক পরিবর্তন করলাম। এবং প্রতিদিন লিখবো, সেই সিদ্ধান্ত আরো জোরেশোরে নিয়ে ফেললাম। ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল পরিত্যাগ করেছি। মাথার মধ্যে ঝি-ঝি ব্যারামটা ওসবে বেড়ে জায়।

কী দুর্ভাগ্য, আজকে সেভ করিনি, সকালে গোসল করিনি, একটা জামা পরেছি যেটা যে কেউ ঘর মোছার ত্যানা বলে ভুল করবে। পায়ে আমার সুবিখ্যাত, পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত দর্শন স্যান্ডেল। এমন অবস্থাতেই কি না দুটো নতুন বালিকার সাথে পরিচয় হলো!

আমার হাতের সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, কিছু কাজ আমাকে করতেই হবে। অফিসের কাজের মধ্যে কিউক্রিপ্ট-টক এর জন্য স্লাইড বানানো। আর রিসার্স প্রোপজাল লেখা। আর নিজের কাজের মধ্যে, লাইন ফাইন্ডিং অ্যালগরিদমটা প্রোগ্রাম করে ফেলা আর বিচ্ছিন্ন গণিত নিয়ে লিখতে বসা।

এখন অবশ্য বাসায় যাবো, ডকলাস অ্যাডাম্সের হিচহাইকারস গাইড টু দ্য গ্যালাক্সি কিনেছি, আর কিনেছি টেরিপ্রাচেড আর স্টিফেন বাক্স্টারের লেখা লং আর্থ। বড় বড় লেখকরা কলাবোরেট করে লিখলে কেমন আউটপুট আসে সেইটা নিয়েই কৌতূহল। পরে অবশ্য কোলাবরেশনের কৌশল নিয়েও ঘাটাঘাটি করব একটু আধটু।

মাইনুট ফিজিক্সের হেনরির ম্যান্ডোলিন বাজানো দেখে অভিভুত হয়েছি। আমার মিউজিক্যাল কর্মকান্ড শুরু করা দরকার। এনিওয়ে, সৃষ্টিশীলতার মূল শর্ত হলো, নিজের ভালোলাগা থেকে সবকিছু করা। অ্যাবসার্ডিটিকে ভয় না পাওয়া। এবং মনে করা, আমার কাছাকাছি রুচির কেউ এটা দেখবে। একেবারে ভিন্ন রুচির কাওকে আনন্দ দেবার জন্য কিছু লেখা আমার জন্য সম্ভব নয়। সেটা কৃত্রিম হবে। বিদঘুটে হবে। ব্যর্থ হবে। বমনউদ্রেগকারী হবে।

প্রতিদিন লিখতে চাই কিছু না কিছু। লেখালিখি বন্ধ করাটা ভুল হয়েছে। অ্যালান মূর অবশ্য ভালো কথা বলেছেন। নিজের লেখার একটা স্টাইল দাড়িয়ে গেলে, সেই স্টাইল ফেলে দিয়ে নতুন স্টাইলের খোঁজ করা উচিত। আমার লেখার একটা স্টাইল দাড়িয়ে গেছিলো। এবন সেই স্টাইলকে ভালোবাসে তেমন একটা পাঠক গোষ্ঠি দাড়িঁয়ে গেছিলো। প্রথম স্টাইলটা ছেড়ে আসতে গিয়ে আমার এই পাঠকদেরও ছেড়ে আসতে হয়েছে। ইন ফ্যাক্ট আমার ভুল হলো নতুন স্টাইল না খুঁজে, আমি লেখালিখিই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। মাথায় গভীরতর চিন্তা আসছিলো না। সেটাও একটা কারণ। মূলত, পড়ছিলাম না তেমন কিছু সেই কারণে। এবং, পৃথিবীপালটএ দেবার একটা চিন্তা মাথায় ঢুকেছিলো।

এখন সিদ্ধান্তে এসেছি, আমি যদি স্রেফ মনের আনন্দেই লিখি। মানে পাঠককে শেখানোর, ইনস্পায়ার করার, ইত্যাদি ইত্যাদি মোটিভের কথা মনে না করে স্রেফ পাঠককে আনন্দ দেবার জন্য লিখি তাহলেই পাঠকের কাছে অনেক ভালো মেসেজ পৌছাবে। প্রথমত, জ্ঞ্যানের কথা যেকোনো প্রাবন্ধিকের থেকে শিখে নেওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, আনন্দই সবচেয়ে বেশি দুর্লভ, এবং অর্থবহ জিনিস। আর নিজের প্রকৃতির উপর বিশ্বাস রাখা উচিত। আমি আনন্দের জন্য কিছু লিখলেও সেটাতে আমার অংশই থাকবে।

এনিওয়ে, গতি আর নৈপূণ্যের চর্চা বাড়াতে হবে। আমার হাতে সময় অল্প। এবন অনেক অনেক কিছু করার আছে। গল্প গুলো যে ইলাস্ট্রেট করতে চাই, সেটাও ভুললে চলবে না। গল্পটল্প লিখে সচলায়তনের প্রথম পাতায় না দিয়ে নিজের পাতায় দেব। এতে শুধু যারা খুঁজে পাবে তারাই পড়বে। যে খোঁজেনি, সে ঐ লেখা ডিজার্ভ করে না। এবং পড়লেও, পরের পলকেই ভুলে যাবে। উপভোগও করবে না তেমন।

মানুষের সামনে এসব এগিয়ে দেওয়া হলো তাদেরকে প্রোকাস্টিনেট করতে সাহায্য করা। তোমার লেখা ওভাবে পড়ে পড়ে, দিন শেষে সে আফসোসই করবে। অনেক সময় নষ্ট করলো ভেবে। কিন্তু যে ব্যক্তি, খুঁজে এসে পড়ছে সে সময় নষ্ট করছে ভাববে না। এবং দিন শেষে দারুণ কিছু জিনিস খুঁজে পেল ভেবে কৃতজ্ঞ থাকবে।

আমার ডিপ্রেশনকে দূরে রাখার একমাত্র উপায় হলো প্রচুর কাজ করা। ক্রিপ্টগ্রাফির যে কোর্স টা করছি, তার এক্সারসাইজগুলো করা হয়নি এখনো। পাইথনে কিছু কোড করার কথা। এইটা করলে, আবার আমার ওসিয়ারের জন্য কাজ শুরু করতে সুবিধা হবে। এ ছাড়া, সুবিনভাইয়ের সাইটের জন্য নতুন সমস্যাটা তৈরিকরে ফেলা দরকার। কনফিজিং নাম্বার নিয়ে। এ ছাড়া একটা এনকোডিং ডিকোডিং প্রবলেম দিতে চাচ্ছিলাম। দেখি ক্রিপ্টো, হোমওয়ার্ক থেকে ইনস্পায়ারেশন পাওয়া যায় কি না।

এখন প্রায় সোয়া-নয়টা বাজে। বাসায় ফিরতে দশটা বাজবে। ঘরদোর সাফ করে, রান্নাবান্না খাওয়া দাওয়া শেষ করে, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। থ্রি মেন ইন এ বোট টা পড়তে শুরু করা যায়।

No comments:

Post a Comment